বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৩ পূর্বাহ্ন
ক্রাইমসিন২৪ ডেস্ক: নির্বাচনের আগে রাজধানীর মতিঝিল থেকে আট কোটি টাকা উদ্ধারের ঘটনায় অর্থপাচার ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১ এর সদস্যরা। অপু হাসপাতালটিতে চিকিৎসাধীন। গ্রেপ্তারের পর তিনি সেখানেই র্যাবের প্রহরায় চিকিৎসাধীন থাকবেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১ অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম। শরীয়তপুর- ৩ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ধানের শীষ প্রতীকে লড়েন অপু।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মতিঝিলের সিটি সেন্টার থেকে প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা এবং ১০ কোটি টাকার চেকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব সদস্যরা। টাকাগুলো ‘একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে ভোট কেনার জন্য’ দুবাই থেকে বাংলাদেশের পাঠানো হয়েছে বলে সে সময় জানান র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
র্যাবের ওই অভিযানে কথিত আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কর্পোরেশনের এমডি আলী হায়দার, গুলশানের আমেনা এন্টার প্রাইজের জিএম (এডমিন) জয়নাল আবেদিন ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করলেও গ্রেপ্তারকৃতদের একজন হাওয়া ভবনে কাজ করত বলে উল্লেখ করেন র্যাব মহাপরিচালক। এ ছাড়াও অফিসটি থেকে শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী নুরু উদ্দিন অপুর পোস্টার পাওয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় টাকা ছড়ানো হতো। সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় যেখানে অভিযান চালানো হয়েছে সেখানে ইউনাইটেড কর্পোরেশন ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই মাস আগে অফিসটি ভাড়া নেয়। গত দুই মাসে অফিস থেকে ১৫০ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। ইউনাইটেড করপোরেশনের কথিত মালিকের গত এক মাসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৩ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন এবং গত দুই মাসে এক কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়েছেন।’
‘প্রাথমিক তদন্তের পর ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচনকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ এবং পেশীশক্তির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতেই টাকাগুলো এখান থেকে পাঠানো হচ্ছে।’
বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এখানে আমরা একজন প্রার্থীর কাগজপত্র দেখতে পেয়েছি যাকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। তিনি শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী নুরু উদ্দিন অপু। তার এলাকায় টাকা যাওয়ার পর নির্বাচনী সহিংসতা হয়েছে। আমরা দেখেছি দেশের যেসব স্থানে টাকাগুলো গেছে সেখানেই সহিংসতা হয়েছে।’
‘শুধুমাত্র এ অফিস থেকে কোনোদিন ১১ কোটি, কোনোদিন ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। টাকাগুলো অধিকাংশ দুবাই থেকে হুন্ডি ও ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে। দুই মাসে আমরা ১৫০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছি। তবে এ অফিসের লোকজন টাকার রেকর্ড বেশিদিন রাখে না। তাই আমরা সব পাইনি। জব্দকৃত যন্ত্রাংশগুলোর ফরেন্সিক টেস্টের পর লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘অফিসটিতে আমরা একটি আসনে ভোটারদের নাম, ফোন নাম্বার ও ঠিকানা সম্বলিত একটি তালিকা পেয়েছি। ধারণা করছি তাদের ভোট কেনার জন্য টাকাগুলো রাখা হয়েছে। যারা কালো টাকা দিয়ে ভোট কিনে, তারা ক্ষমতায় এলে দেশের অর্থনীতির কি হবে সেটা সবার অনুমেয়। জিজ্ঞাবাদের পর এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান বেনজীর আহমেদ।